নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি

নামাজ না পড়ার শাস্তি আমরা অনেকেই জানিনা। নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি রয়েছে।  ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই নামাজ পড়তে হবে। নামাজ না পড়ার শাস্তি প্রদান করা হবে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে নামাজ না পড়ার শাস্তি কি হতে পারে সে বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করবো।

আপনি যদি নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন দেরি না করে নামাজ না পড়ার শাস্তি এবং নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য কিছু তথ্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

toc) #title=(Table of Content)

নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি

মুসলিম হিসেবে আমরা সকলেই জানি যে ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হল নামাজ। নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি রয়েছে। ঈমানের পর নামাজের যে গুরুত্ব অন্য কোন এবাদত প্রদান করা হয়নি, তাহলে এখান থেকে বোঝা যায় যে নামাজের গুরুত্ব কতটা বেশি। আমরা অনেকেই অলসতার কারণে নামাজ পড়ি না। 

আজকের এই আর্টিকেলে নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে সাজানো আজকের এই আর্টিকেল। যারা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন থাকেন, তাদের ব্যাপারে শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 

আল্লাহ তা'আলা এ ব্যাপারে বলেন, "দুর্ভোগ সেসব নামাজের জন্য নিজেদের নামাজের ব্যাপারে যারা থাকে গাফেল"। রোজ হাশরে নামাজের মাধ্যমে হিসেব নিকাশ শুরু করা হবে। যার নামাজ ঠিক হবে তার অন্যান্য আমল গুলোর সঠিক হলে বিবেচিত হবে। 

যে ব্যক্তি নামাজের ব্যাপারে অলসতা করে থাকে ১৫ ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে।নামাজ না পড়ার শাস্তির মধ্যে ৫ ধরনের শাস্তি দুনিয়াতে দেওয়া হবে। ৩ ধরনের শাস্তি মৃত্যুর সময়। ৩ ধরনের শাস্তি কবরে এবং ৪ ধরনের শাস্তি কবর থেকে উঠানোর পরে দেওয়া হবে। এভাবে মোট ১৫ টি শাস্তি দেওয়া হবে।

দুনিয়াতে যে ৫টি শাস্তি দেয়া হবে তা হলো

  • বেনামাজির জীবনের বরকত ছিনিয়ে নেয়া হবে।
  • বেনামাজির চেহারা থেকে নেককারের নূর দূর করে দেওয়া হবে।
  • বেনামাজির নেক কাজের কোন ফল দেয়া হবে না।
  • বেনামাজির কোন দোয়া কবুল হবে না।
  • নেক বান্দাদের দুয়ার মধ্যে বেনামাজির কোনো হক থাকবে না

মৃত্যুর সময় যে ৩টি শাস্তি দেওয়া হবে সেগুলো হল

  • বেনামাজির মৃত্যু জিল্লতি ও অপমানের সঙ্গে হবে।
  • ক্ষুদার্থ অবস্থায় বেনামাজি মৃত্যুবরণ করবে।
  • অনেক পিপাসার্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। ঠিক যেন সমুদ্রের সমপরিমাণ পানি পান করলেও তার পিপাসা মিটবে না।

কবরের মধ্যে যে ৩টি শাস্তি দেওয়া হবে

  • বেনামাজির জন্য কবর খুব সংকীর্ণ হয়ে যাবে। এমন সংকীর্ণ হবে যে এক পাশের বুকের হাড় অন্য পাশে ঢুকে যাবে।
  • বেনামাজির কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।
  • বেনামাজির কবরে এমন একটি সাপ নিযুক্ত করা হবে, সেই সাপের চোখ হবে আগুনের, নখগুলো হবে লোহার। তার প্রতিটি নখ লম্বা হবে একদিনের দূরত্বের পথ পরিমাণ।

কবর থেকে উঠানোর পরে যে ৪টি শাস্তি দেওয়া হবে

  • বেনামাজির হিসাব খুব কঠিন ভাবে নেওয়া হবে।
  • আল্লাহ তাআলা বেনামাজির উপর অসন্তুষ্ট হয়ে থাকবেন।
  • বেনামাজিকে জাহান্নামে দেওয়া হবে। 
  • বেনামাজির চেহারায় তিনটি লাইন লেখা থাকবে। 
  1.  হে আল্লাহর হক নষ্টকারী।
  2. হে আল্লাহর গোস্তায় পতিত ব্যক্তি।
  3. তুমি দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর হক নষ্ট করেছিলে, তেমনি তুমি আজ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ।

মৃত্যুর পর নামাজ না পড়ার শাস্তি–নামাজ না পড়ার শাস্তি কত বছর

নামাজ না পড়ার শাস্তি কত বছর? এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। নামাজ হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হল নামাজ এবং কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথমে নামাজের হিসাব নেয়া হবে। 

মৃত্যুর পর নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে আমরা জেনে থাকলে অবশ্যই নামাজ পড়তে উৎসাহিত হব। তাই আপনাদের জন্য মৃত্যুর পর নামাজ না পড়ার শাস্তি কি হবে এবং নামাজ না পড়ার শাস্তি কত বছর? সে সম্পর্কে জানাবো–

মৃত্যুর পরে অর্থাৎ কবরে বেনামাজিকে তিনটি শাস্তি দেওয়া হবে এবং কবর থেকে উঠানোর পর বেনামাজিকে চারটি শাস্তি দেওয়া। তাহলে মৃত্যুর পরে মানুষকে অর্থাৎ বেনামাজিদের ৭টি শাস্তি দেয়া হবে। মৃত্যুর পর নামাজ না পড়ার শাস্তি গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। এক ওয়াক্ত নামাজ বাদ পড়লে ২ কোটি ৬৮ লক্ষ বছর জাহান্নামের শাস্তি দেয়া হবে।

১। বেনামাজিদের কবর আকারে খুবই ছোট হয়ে যাবে। ছোট হবে বেনামাজির একপাশের বুকের হাড় অন্য পাশে ঢুকে যাবে।

২। বেনামাজির কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।

৩। বেনামাজির কবরে একটি সাপ নিযুক্ত করা হবে। এই সাপ তাদের জন্য নিযুক্ত করা হয় যারা ফজরের নামাজ পড়ে না। ফজরের নামাজ নষ্ট করার কারণে সূর্য উদয় পর্যন্ত দংশন করতে থাকবে।

জোহরের নামাজ নষ্ট করার কারণে আসর পর্যন্ত ধ্বংস করতে থাকবে। আসরের নামাজ নষ্ট করার কারণে মাগরিব পর্যন্ত আর মাগরিবের নামাজ নষ্ট করার কারণে এশা পর্যন্ত এবং এশার নামাজ নষ্ট করার কারণে ফজর পর্যন্ত ধ্বংস করতে থাকবে। এই সাপ দংশন করার সাথে সাথে ৭০ হার মাটির নিচে ঢুকে যাবে। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।

৪। কিয়ামতের দিন বেনামাজির হিসাব খুব কঠিন ভাবে নেয়া হবে।

৫। আল্লাহ তা'আলা বেনামাজি দের উপর অসন্তুষ্টতা থাকবেন।

৬। বেনামাজিদেরকে জাহান্নামে দেওয়া হবে।

৭। বেনামাজিদের চেহারায় তিনটি লাইন লেখা থাকবে। হে আল্লাহর হক নষ্টকারী!, হে আল্লাহর গুস্তায় পতিত ব্যক্তি, তুমি দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর হক নষ্ট করেছিলে, ঠিক তেমনভাবে আজ আল্লাহর রহমত থেকে তুমি নিরাশ।

আরো পড়ুনঃ নামাজের প্রয়োজনীয়তা ও নামাজ পড়ার নিয়ম

এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি–ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়ার শাস্তি কি?

আমরা অনেকেই এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে জানিনা। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানা উচিত। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ রয়েছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়। তাদেরকে ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়ার শাস্তি কি? এ বিষয়ে অবশ্যই জানতে হবে।

এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি ২ কোটি ৬৮ লক্ষ বছর জাহান্নামের শাস্তি দেওয়া হবে। আমাদের প্রিয় নবী সাঃ বলেন, যদি কোন ব্যক্তি একক এক ওয়াক্ত সালাত ছেড়ে দেয় আর ইতিমধ্যে এই সালাতের ওয়াক্ত পার হয়ে যায় এবং সালাত আদায় করে নেয়, তবুও থাকে এক হুকবা জাহান্নামের শাস্তি দেওয়া হবে।

আল্লাহ তাআলা নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। ১৫ টি আযাবের মধ্যে ছয়টি দুনিয়ায়, তিনটি মৃত্যুর সময়, তিনটি কবরের মধ্যে, তিনটি হাশরের মধ্যে দেয়া হবে। ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়ার শাস্তি কি?

ইচ্ছাকৃত কারণে যে নামাজ আদায় করবে না। তার জীবনে কোনরকম বরকত থাকবে না, আল্লাহ তার চেহারা থেকে নেক লোকের চিহ্ন তুলে নেবেন, সে কোন নেক কাজের সওয়াব পাবে না, ফেরেশতাগণ তার উপরে অসন্তুষ্ট থাকবেন, ইসলামের মূল্যবান নেয়ামত সমূহ হতে বঞ্চিত করা হবে।

ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি–নামাজ না পড়ার শাস্তি

আমরা অনেকেই ফজরের নামাজ পড়তে পারি না। কারণ ফজরের নামাজ অনেক ভুরে উঠে পড়তে হয়। যার ফলে এই নামাজটি বেশিরভাগ মানুষের বাদ পরে যায়। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের আল্লাহ তায়ালার জন্য এইটুকু কষ্ট করতে হবে। আমরা যদি ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে খুব সহজে এখান থেকে সতর্ক হতে পারব।

ফরজ নামাজ আদায় না করা মারাত্মক অপরাধ। পদ্ধতিগতভাবে পার্থক্য থাকলেও আগের নবীদের যুগেও নামাজের বিধান ছিল। কিন্তু তাদের পরবর্তী লোকেরা নামাজের ব্যাপারে গাফিল হয়ে পড়ে। এর পরিণতি হলো জাহান্নাম। আমাদেরকে ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তির সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন "নবী ও হেদায়েত প্রাপ্তদের পর এলো এমন এক অপদার্থ বংশধর যারা নামাজ বিনষ্ট করলো এবং প্রবৃত্তির পূজারী হলো।" সুতরাং তারা "গাই" নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে যারা এরপর তওবা করে নিয়েছে ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে এবং তাদের প্রতি কোন ধরনের জুলুম করা হবে না। {মারিয়াম,আয়াতঃ ৫৯-৬০}

হাদিসে রাসূল সাঃ এরশাদ করেন, আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজেরই। যে নামাজ ত্যাগ করল সে কাফির হয়ে গেল। {তিরমিজি হাদিস- ২৬২১, ইবনে মাজাহ হাদীস-১০৮৮} 

ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ছেড়ে দিলে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির উপর থেকে তার রক্ষণাবেক্ষণ তুলে নেন।

আরো পড়ুনঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা (Benefits and harms of Thankuni leaves‍‍‍‌)

নামাজ না পড়ার শাস্তির ঘটনা

আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করার জন্য। নামাজ না পড়ার ১৫টি শাস্তি রয়েছে, বেনামাজিকে এর শাস্তি ভোগ করতে হয়। এদিকে দুনিয়াতে এসে আমরা আল্লাহ তাআলার এবাদত বলে কি বিভিন্ন রকম খারাপ কাজের সাথে লিপ্ত হয়ে গেছি। আল্লাহ তাআলার এবাদত করার জন্য তিনি অনেকগুলো পদ্ধতি আমাদেরকে দিয়েছেন। 

তার মধ্যে নামাজ অন্যতম একটি ইবাদত। ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হল নামাজ।নামাজ না পড়ার শাস্তির ঘটনা আমরা কতজন জানি? কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই নামাজ পড়া উচিত। যদি আমরা নামাজ না পড়ি, তাহলে নামাজ না পড়ার শাস্তির ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। 

আল্লাহতালা বান্দার প্রতি কাজের হিসাব নেবেন। আর প্রতি কাজের হিসাব দিতে না পারলে শাস্তি অবধারিত। শাস্তি প্রাপ্ত মানুষকে তাদের অপরাধের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তারা তাদের অপরাধ গুলোও বলতে পারবে।

আল্লাহতালা কুরআনে সে কথা তুলে ধরেন এভাবে, "কোন জিনিস তোমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে এলো? তারা বলবে আমরা নামাজিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।" {সূরা আল মুদ্দিচ্ছিরঃ আয়াত ৪২-৪৩}

শেষ কথা

নামাজ না পড়ার শাস্তির ঘটনা, ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি, ইচ্ছাকৃত নামাজ না পড়ার শাস্তি কি? এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি, নামাজ না পড়ার শাস্তি কত বছর? মৃত্যুর পর নামাজ না পড়ার শাস্তি এবং নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই উক্ত বিষয়গুলো জানা উচিত।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন, বরকতময় জীবন গড়ে তুলুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।








#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!