চুলকানি দূর করার উপায়

কম বেশী আমাদের সকলেরই চুলকানির সমস্যা পড়তে হয়। চুলকানি হচ্ছে একটি স্বাভাবিক রোগ। চুলকানি সাধারণত জীবাণু বা অপরিষ্কার থাকলে হয়ে থাকে। আমরা কিছু সাধারন ঘরোয়া উপায় বা সতর্কতার মাধ্যমে চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে পারি। চুলকানি সাধারণত অপরিষ্কার থাকলে হয়ে থাকে। 

চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের অবশ্যই সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। প্রতিদিন গোসল করা চুলকানির দূর করার জন্য কার্যকরী। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে চুলকানি বা এলার্জির মত কোন রোগ আমাদের শরীরে সৃষ্টি হয় না। তাই সবসময় চেষ্টা করতে হবে নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার। 

আমাদের শরীরে চুলকানি হলে চুলকানি থামতে চায়না। চুলকাতে চুলকাতে অনেক সময় এমন অবস্থা হয় চামড়া লাল হয়ে যায় বা রক্ত বের হয়, তাও চুলকানি থামেনা। ত্বকের চুলকানিতে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা দারুণ কার্যকর হতে পারে। ঘরোয়া উপায় অবলম্বনের পরও চুলকানি না কমলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন চুলকানি দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন জেনে আসি চুলকানি দূর করার উপায়।

toc) #title=(Table of Content)

চুলকানির সমস্যা কেন হয়

বর্তমান সময়ে চুলকানি একটি গুরুতর সমস্যা। চুলকানি হচ্ছে খুবই বিরক্তকর এবং অসহ্যকর একটা রোগ। চুলকানির জন্য অনেকেই প্রতিনিয়ত অনেক টাকা খরচ করে যাচ্ছেন কিন্তু কোন সফলতা পাচ্ছেন না। চুলকানি আপনার শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। চুলকানি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। চুলকানির নানা কারণে হতে পারে, তবে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে অন্য চুলকানি রোগির সংস্পর্শে এসে বা আপনি যদি নিজে অপরিষ্কার থাকেন। 

এছাড়া বিভিন্ন ধরনের গাছ, পোকামাকড়,খাদ্য রাসায়নিক উপাদান এলার্জিজনিত রোগের কারণেও চুলকানি হয়ে থাকে। চুলকানি রোগ সাধারণ হলেও এটি বিরক্তিকর। এবং এটির দ্রুত চিকিৎসা না নিলে এর থেকে বড় বড় রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চুলকানিকে ছোঁয়াচে রোগও বলা হয়। কারণ এটি মানুষের ছোঁয়া থেকেও হয়ে থাকে। 

চুলকানি সাধারণত অপরিষ্কার থাকলে বা এলার্জি জনিত কোন খাবার খেলেও হয়ে থাকে। চুলকানি যুক্ত খাবারের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য খাবার হল কচু ,বেগুন ,ডাল, টমেটো ,গরুর মাংস, ডিম ইত্যাদি। তাই যাদের চুলকানি এবং এলার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তারা এ সকল খাবার থেকে দূরে থাকুন। এবং চুলকানি দূর করার উপায় সম্পর্কিত কিছু ঘরোয়া সমাধানও রয়েছে,নিম্নে দেওয়া হলো-

আরো পড়ুনঃ আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায়

চুলকানির সমস্যায় ঘরোয়া সমাধান

সব রোগেরই কোনো না কোনো প্রাথমিক চিকিৎসা বা ঘরোয়া চিকিৎসা থাকে। চুলকানির মতো সমস্যা সাধারণত অপরিষ্কার থাকলে হয় তাকে। চুলকানির রোগ মারাত্মক কোন রোগ না হলেও এটি অনেক অসহ্যকর ও অস্বস্তিবোধ একটি রোগ। সব রোগেরই সমাধান থাকে। চুলকানি দূর করার উপায় হিসেবে অথবা চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে আপনি কি করতে পারেন তা নিচে উল্লেখ করা হলো–

বরফ - আমরা যখন চুলকায় বা আমাদের যে জায়গায় চুলকায়, সে জায়গা চুলকানোর সময় বা পরে গরম হয়ে যায়। যে জায়গায় চুলকানি হয়েছে সেখানে ঠাণ্ডা কিছু লাগান। যেমন- বরফের টুকরো, ঠাণ্ডা জল এইসব দিলে আরাম পাবেন।

ওটমিল - স্নানের সময় ওটমিল দিয়ে স্ক্রাবার বানিয়ে নিয়মিত স্ক্রাব করুন। এর ফলে র‍্যাশ, অ্যালার্জি, চুলকানি, জ্বালাভাব এগুলো দূর হবে। আপনি চুলকানি থেকে মুক্তি পাবেন

অ্যালোভেরা - অ্যালোভেরা চুলকানোর সমাধান হিসেবে বেশ কার্যকরী। ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার মতো ভাল উপকরণ আর কিছুই নেই। ত্বকের প্রায় সব সমস্যারই সমাধান রয়েছে এই অ্যালোভেরায়। তাই যেসব অংশে র‍্যাশ, অ্যালার্জি বা চুলকানি রয়েছে, সেখানে অ্যালোভেরা জেল লাগালে আরাম পাবেন। তাই চুলকানির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অ্যালোভেরার পেস্ট বানিয়ে লাগাতে পারেন।

নারকেল তেল - অনেক সময় দেখা যায় আমাদের শরীরের ত্বক রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে গেছে। ত্বক রুক্ষ বা শুষ্ক হয়ে গেলেও চুলকানি বা র‍্যাশের সমস্যা হতে পারে। ত্বকের সেই রুক্ষ, শুষ্ক জায়গা যেখানে র‍্যাশ হয়েছে সেখানে পুরু করেন নারকেল তেল লাগাতে পারেন। এর প্রভাবে ত্বক ময়শ্চারাইজড থাকে এবং চুলকানি কমে আসে।

টি ট্রি অয়েল - চুলকানোর সমাধান হিসেবে একটি অয়েল হচ্ছে টি ট্রি ওয়েল। টি ট্রি অয়েলও সমস্ত রকম স্কিন র‍্যাশ নিরাময়ে দারুণ ভাবে কাজ করে। সরাসরি টি ট্রি অয়েল র‍্যাশ বা অ্যালার্জি কিংবা চুলকানি, লাল হয়ে যাওয়া জায়গায় লাগান। কোনও রকম ক্রিম বা অন্য তেলের সঙ্গে মেশাবেন না।

আরো পড়ুনঃ রাত জেগে স্মার্টফোন ব্যবহারে কি কি ক্ষতি হয়

চুলকানি দূর করার ৫টি উপায় 

গরমে ত্বকের অন্যতম, অস্বস্তিকর একটি সমস্যা হচ্ছে চুলকানি। বিভিন্ন ধরনের নামিদামি প্রসাধনী ব্যবহার না করে, চুলকানি দূর করার উপায় হিসেবে কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করা উচিত। যেকোনো সময় কেমিক্যাল যুক্ত উপাদানগুলো থেকে, প্রাকৃতিক উপাদান গুলোই বেশি কার্যকরী হয়। 

১) অ্যাপেল সিডার - আপনি চুলকানোর সমাধানে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাপেল সিডার ভিনিগারও ত্বকের র‍্যাশ দূর করতে সাহায্য করে।

২) বেকিং সোডা - চুলকানির সমস্যার জন্য আপনি বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারবেন। স্নানের সময় জলে বেকিং সোডা কিংবা এপসম সল্ট মিশিয়ে স্নান করতে পারেন। এর প্রভাবেও ত্বকের বিভিন্ন র‍্যাশ, অ্যালার্জি দূর হয় যায়। 

৩) লেবুর রস - চুলকানির জন্য লেবুর রস হচ্ছে অনেক কার্যকরী। লেবুর রস খুবই ভালো চুলকানি বিরোধী একটি ফল। লেবু একটি এন্টি ফাংগাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যে স্থানে চুলকানি সেই স্থানে লেবুর রস লাগিয়ে শুকিয়ে নিলে চুলকানি দূর করা সম্ভব।

৪) নিমপাতা - আপনারা তো জানেনই নিমপাতা কে চর্ম রোগের প্রদান ঔষধ বলা হয়। নিমপাতা বেটে চুলকানির স্থানে লাগালে চুলকানি রোধ করা যায়। অথবা নিমপাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে গোসল করলে অনেক চুলকানি থেকে উপকার পাওয়া যায়।

৫) নারকেল তেল - নারকেল তেল হচ্ছে তৎকালীন চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটি পদ্ধতি। আপনার যখন চুলকাবে তখন আপনি নারকেল তেল মাখলে চুলকানি থেকে মুক্তি পাবেন।

আরো পড়ুনঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা (Benefits and harms of Thankuni leaves‍‍‍‌)

চুলকানির ঔষধ

বর্তমানে প্রায় অনেকেই চুলকানি জনিত সমস্যায় পড়ে থাকেন। চুলকানি সাধারণত গরমের দিনে ঘামের কারণে বেশি হয়ে থাকে। যার জন্য অসংখ্য মানুষ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার করে। অনেকেই আছেন যারা সারা গায়ে চুলকানি ঔষধ অনুসন্ধান করেন। চুলকানি দূর করার উপায় হিসেবে ঘরোয়া উপায়গুলোই যথেষ্ট। তবে চুলকানি যদি বেশি হয়ে থাকে তার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞ চর্মরোগের চিকিৎসক এবং ঔষধের।

চুলকানি রোগ সাধারণ হলেও এটি দ্রুত প্রতিকার করা উচিত। চুলকানি দূর করার উপায় অবলম্বন না করলে অথবা চুলকানির সমস্যা দ্রুত প্রতিকার না করলে চুলকানি থেকে বড় বড় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিচে কিছু ওষুধের নাম দেওয়া হল। আপনার রোগীর জন্য কোন ওষুধ দরকার সেটা জানা থাকলেও যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত। তাই যেকোন ঔষধ সেবন করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন।

  • Alatrol
  • Atarax
  • Darma 
  • Ordain
  • Diphenhydramine
  • Fexofenadine
  • Desloratadine
  • Sendo
  • Cetirizine

উপরোক্ত ওষুধগুলো হচ্ছে চুলকানির ঔষধ। তবে এগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এবং চুলকানি দূর করার উপায়ে রয়েছে কয়েক ধরনের মলমও, যেমন - pevisone, Fungine, Fungine-B, Fungidal-Hc.

বি:দ্র: এখানে উল্লেখিত ঔষধ বা মলমগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।

আরো পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

শেষ কথা 

চুলকানি হচ্ছে খুবই বাজে এবং অস্বস্তিকর একটি রোগ। আপনি যদি চুলকানি রোগে ভুগেন তাহলে এর তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করা উচিত। চুলকানি থেকে বড় ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন চুলকানি দূর করার উপায় এবং কিভাবে চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সেই সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য। 

এতক্ষন আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন, চুলকানির মতো অস্বস্তিকর রোগকে বর্জন করুন। খাবারের মধ্যে বেশি পরিমাণে সবুজ শাকসবজি রাখুন, তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং বেশি পরিমাণে পানি পান করুন। ধন্যবাদ। 

আরো পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়াম

চুলকানি দূর করার উপায় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

প্রশ্ন ১: চুলকানির জন্য কি ক্রিম? 

উত্তর:- দুই পায়ের সংযোগস্থলে, নিতম্বের মধ্যে ছত্রাক ঘটিত সংক্রমণ, উরু এবং যৌনাঙ্গের ত্বকের উপর ছত্রাক ঘটিত সংক্রমনের মতো অথবা শরীরের যেকোন অংশে চুলকানি ব্যাধিগুলোর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় ফাঙ্গিড্রাম ক্রিম (Fungiderm cream)। এটা মূলত চুলকানির জন্য ব্যবহার করা হয়। 

প্রশ্ন ২: চুলকানির ঘরোয়া চিকিৎসা কি? 

উত্তর:- আপনার শরীরের বা ত্বকের যে অংশে চুলকানি হচ্ছে, সেখানে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার লাগাতে পারেন। এক কাপ পানিতে এক চা চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে, ছোট একটি তুলোর বল বানিয়ে তা ওই মিশ্রণে ডুবিয়ে নিয়ে ত্বকের উপর লাগিয়ে নিবেন। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের অ্যাসেটিক অ্যাসিড আপনাকে চুলকানি থেকে রেহাই দিতে সাহায্য করবে। 

প্রশ্ন ৩: চুলকানির জন্য কোন মলম ব্যবহার করা হয়? 

উত্তর:- নন প্রেসক্রিপশন কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিমের স্বল্পমেয়াদি ব্যবহার চুলকানির জন্য ও স্ফীত ত্বকের স্বল্পমেয়াদি উপশম দিতে পারে। তাছাড়াও ক্যালামাইন লোশন বা মেন্তল, সারনা, কর্পূর, ক্যাপসাইসিন অথবা প্রমোক্সিন এগুলোর মতো সাময়িক অ্যানেস্হেটিক সহ ক্রিম ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে অবশ্যই এগুলো শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। 

প্রশ্ন ৪: গোসলের পর শরীর চুলকানির কারণ কি? 

উত্তর:- গোসলের পরে শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতার অভাব থাকে, এবং টানটান বা চুলকানি অনুভব করতে পারেন। তাই গোসলের পর পরই আপনার শরীরে লোশন বা গ্লিসারিন (যে যা ব্যবহার করেন) ব্যবহার করবেন। তাহলে ত্বক শুষ্ক বা টানটান হবে না এবং চুলকানিও উঠবে না। 

প্রশ্ন ৫: চুলকানি কমবে কিভাবে? 

উত্তর:- ত্বকের যে অংশে চুলকানি হচ্ছে, সেই অংশে অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার লাগাতে পারেন। এছাড়াও নারকেল তেল, বরফ, অ্যালভেরা এরকম ঘরোয়া অনেক উপায় রয়েছে যা অবলম্বন করলে চুলকানি থেকে মুক্তি পাবেন।


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!