কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন

আল্লাহ তাআলা মানুষকে কোনো মাধ্যম ছাড়াই রহমত, বরকত, মাগফেরাত দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনিই সেই প্রভু যিনি তার ঘোষণা অনুযায়ী তাকে ডাকলেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সব কল্যাণ দান করবেন। দোয়া কবুলের অন্যতম শর্তই হচ্ছে, তাঁকে প্রাণভরে ডাকা। 

আল্লাহ্ কাছেই সব কল্যাণ প্রার্থনা করা। তিনিই সব কিছু বান্দাকে দিতে পারেন এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা। তারপরও আল্লাহ তাআলাকে ডাকতে, তাঁর কাছে কোনো কিছু চাইতে কিংবা তার কাছে কোনো কল্যাণ বা নেয়ামত পেতে হলে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। যা আহ্বানকারী বা প্রার্থনাকারীর জন্য আবশ্যক। 

আমাদের আজকের এই পোস্টটির মূল বিষয় কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন। দোয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য বা কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন তার বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তো চলুন আর দেরি না করে জেনে আসি, কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন বা দোয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য-

toc) #title=(Table of Content)

আল্লাহর কাছে দোয়া করার ক্ষেত্রে ২টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা এসেছে হাদিসে।

. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলমান যখন অন্য কোনো মুসলমানের জন্য দোয়া করে, যার মধ্যে কোনোরূপ গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা থাকে না; আল্লাহ তাআলা এ দোয়ার বিনিময়ে তাকে ৩টির যে কোনো একটি দান করে থাকেন-

  • > তার দোয়া দ্রুত কবুল করে থাকেন;
  • > তার প্রতিদান আখেরাতে দেওয়ার জন্য রেখে দেন, কিংবা
  • > তার থেকে অনুরূপ আরেকটি কষ্ট দূর করে দেন।

(প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর) এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি দোয়া করবো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ আরও বেশি দোয়া কবুলকারী।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)

. দোয়া কবুলে আরও ৩টি শর্ত এসেছে হাদিসের অন্য এক বর্ণনায়। যা শুধু দোয়া কবুল নয় বরং সব ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত করা হয়েছে। তা হলো-

  • > দোয়াকারীর খাদ্য, পানীয় ও পোশাক পবিত্র হতে হবে। (অর্থাৎ হারাম অর্থ ব্যয় এ না হওয়া)
  • > দোয়া কবুল হওয়ার জন্য ব্যস্ত না হওয়া।
  • > দোয়ার সময় উদাসিন বা বেখেয়াল না হওয়া এবং দোয়া কবুলের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী হওয়া।’ (মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম, মিশকাত ও তিরমিজি)

আরো পড়ুনঃ মহানবী (সা.) এর প্রিয় খাবার

দোয়া করার সর্ব উত্তম মাধ্যম

কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন এবং আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কিছু শিষ্টাচার ও শর্ত রয়েছে। এসব শিষ্টাচার দোয়া কবুল হওয়ার জন্য সহায়ক। যেমন—

  • ১. নিবিষ্ট মনে দোয়া করাঃ নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কবুলের দৃঢ় প্রত্যয় রেখে তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। জেনে রেখো, উদাসীন ও অমনোযোগী মনের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)
  • ২. কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করাঃ মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের দোয়া কবুল করা হয় যতক্ষণ সে তাড়াহুড়া না করে। যেমন সে বলল, আমি দোয়া করলাম কিন্তু তা কবুল হলো না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৭)
  • ৩. আশা নিয়ে দোয়া করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন দোয়া করে তখন এভাবে বলা উচিত নয় যে হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ক্ষমা করেন যদি আপনার ইচ্ছা হয়।বরং বড় আকাঙ্ক্ষা পোষণ করবে। কেননা তিনি এমন এক সত্তা যেকোনো কিছুই দান করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৯৮৮)

  • ৪. অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করাঃ আল্লাহ অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রার্থনা করো গোপনে অশ্রুসিক্ত হয়ে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)
  • ৫.আল্লাহর গুণবাচক নাম নিয়ে দোয়াঃ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। সুতরাং তোমরা তাঁকে সে নামেই ডাকবে। (সুরা : আরাফ, আয়াত :১৮০)

মুমিনের কোনো দোয়া নিষ্ফল নয় : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলমান যখন কোনো দোয়া করে, যাতে কোনো গুনাহের কাজ অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছেদের কথা নেই, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে এ তিনটির যেকোনো একটি দান করেন। হয়তো তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দুনিয়াতে দান করেন বা তা তার আখিরাতের জন্য জমা রাখেন অথবা তার অনুরূপ কোনো অমঙ্গলকে তার থেকে দূরে রাখেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১১১৩৩)

আরো পড়ুনঃ নামাজের প্রয়োজনীয় ১২টি সূরা

যেসব আমলে আল্লাহ দ্রুত দোয়া কবুল করবেন 

কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন তার প্রেক্ষিতে যেমন - মুসলমান হিসেবে আমরা কমে বেশি সবাই দোয়া করি। এটা অনেকটা স্বভাবজাত বিষয়। তবে দোয়া করার সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে খেয়াল রাখা দরকার। এগুলোকে আলেমরা দোয়া কবুলের শর্ত ও আদব বলে অভিহিত করেছেন।

পবিত্রতা অর্জনঃ পবিত্রতা অর্জনের পর দোয়া করলে আল্লাহতায়ালা সেই দোয়া কবুল করবেন। রাত জেগে তাওহীদের সাক্ষ্য দিয়ে দোয়া করলে সেই দোয়া আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না। 

বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করাঃ বিনয়ের সঙ্গে দু’হাত তুলে দোয়া করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার নিকট হাত তুলে হাতের তালু সামনে রেখে দোয়া কর। হাত উল্টো করো না। দোয়ার শেষে উত্তোলিত হাত মুখমন্ডলে বুলিয়ে নাও। ’ -আবু দাউদ

আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফসহ দোয়া করাঃ আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফসহ দোয়া করা। আল্লাহর প্রশংসা যেমন, ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন’ দোয়ার শুরুতে বলা। এছাড়া ইসমে আজমের সহিত দোয়া করা উত্তম।

মিনতিভরা কন্ঠে দোয়া করাঃ মিনতি ও নম্রতার সঙ্গে দোয়া করলে তা ইবাদত হিসেবে গন্য হয়। রাসূলে মকবুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া সব ইবাদতের মজ্জা ও সারাংশ। ’ দাসত্বের পরিচয় প্রদানই ইবাদতের উদ্দেশ্য। বান্দার নিজের দীনতা ও অক্ষমতা বুঝতে পারা এবং আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও অপার মহিমা উপলব্দি করার মধ্যেই দাসত্বের প্রকাশ ঘটে। 

আরো পড়নঃ নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি

দোয়ার মাধ্যমে এ দু’টি বিষয়ের পরিচয় পাওয়া যায়। অর্থাৎ নিজের অক্ষমতা ও অসহায়ত্ব এবং আল্লাহর অপ্রতিহত ক্ষমতা, অপার মহিমা ও প্রতাপ অন্তরে স্থান পাওয়া আবশ্যক। দীনতা ও নম্রতা দোয়ার মধ্যে যত অধিক হবে ততই মঙ্গল।

দু’হাত তুলে দোয়া করাঃ বিনয়, নম্রতা ও দাসত্ব প্রকাশ করার জন্য দোয়ার সময় দু’হাতের তালু আসমানের দিকে রাখতে হবে এবং হাত সম্পূর্ণ সম্প্রসারিত করে দু’হাতের মধ্যে ২/১ আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখতে হবে। 

হাত কচলানো, রশি পাকানোর মতো হাতের তালু ঘষাঘষি করা দোয়ার আদবের খেলাপ। 

মনে রাখবেন, আপনি শাহানশাহের দরবারে হাত তুলেছেন, তাই এখানে কোনো ধরনের অমনোযোগিতা কাম্য নয়। এছাড়া দোয়া শেষে দু’হাত তুলে দোয়া করে দোয়া শেষে হাত দু’টি মুখমন্ডলে মুছে নিবেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, ‘যে হাত আল্লাহর দরবারে উত্তোলিত হয়, তা একেবারে শূণ্য অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন। ’

এতক্ষণ আমরা জানলাম কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন এই সম্পর্কে। আমরা অনেক সময় দোয়া করার পরেও সেই দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। তখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে এত দোয়া করার পরও আল্লাহ তা কবুল করেন না কেন? তো চলুন এবার জেনে আসি দোয়া কবুল না হওয়ার কিছু কারন সম্পর্কিত তথ্য। 

আরো পড়ুনঃ নামাজের প্রয়োজনীয়তা ও নামাজ পড়ার নিয়ম

দোয়া কবুল না হওয়ার ৫ কারণ

দোয়া মুমিনদের হাতিয়ার। দোয়ার মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। এমনকি দোয়ার ফলে ভাগ্যও ঘুরে যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। 

আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো’ (সূরা মুমিন, আয়াত ৬০।) আরবি দোয়া শব্দের অর্থ ডাকা, আহ্বান করা, প্রার্থনা করা, কোনো কিছু চাওয়া ইত্যাদি।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২১৩৯।) দোয়া সব ইবাদতের মূল। দোয়া কবুলের অনেক শর্ত আছে। আল্লাহর উদ্দেশে একমাত্র তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য খালেস দিলে দোয়া করতে হবে। 

১) নিরাশ না হওয়াঃ দোয়ার পর আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করবেন। নেতিবাচক কোনো চিন্তা করা যাবে না। অন্যথায় এ দোয়া কবুল নাও হতে পারে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। 

যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। (বুখারি, হাদিস : ৬৩৪০)

২) হারাম থেকে বেঁচে থাকাঃ দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে হারাম খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি পরিহার করা। হারাম উপার্জনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে যতই দোয়া করা হোক, তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না। 

রাসুল (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও পুরো শরীর ধুলোমলিন। সে আসমানের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। 

এমতাবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে? (তিরমিজি, হাদিস : ৮৯৬৯)

৩) আল্লাহপ্রদত্ত দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়াঃ হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎ কাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। 

তা না হলে আল্লাহ তাআলা শিগগির তোমাদের ওপর তাঁর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তাঁর কাছে দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া গ্রহণ করবেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৯)

৪) আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা একটি বড় ধরনের পাপ। এই পাপের শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গাতেই ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। 

হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মুসলিম দোয়া করার সময় কোনো গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির কোনো একটি দান করেন। 

(১) হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন,

(২) অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন এবং 

(৩) অথবা তার কোনো অকল্যাণ বা বিপদাপদ তার থেকে দূরে করে দেন। সাহাবিরা বলেন, তাহলে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি বলেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (আত-তারগীব, হাদিস : ১৬৩৩) 

৫) দোয়ায় পূর্ণ মনোযোগ না থাকাঃ দোয়ার সময় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দোয়া করতে। আল্লাহ অবচেতন মনের দোয়া গ্রহণ করেন না। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া কোরো। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না। 

(তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯) দোয়ার সুন্নাত তরিকা হল- আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূল (সা.)-এর ওপর দরূদ পড়ে দোয়া করা। বিনয় কাকুতি-মিনতি করে দোয়া করা এবং দোয়া কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা নিজের প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সঙ্গোপনে। 

তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না’ (সূরা আরাফ, আয়াত ৫৫)। আশা ও ভয়ভীতি নিয়ে দোয়া করা। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তাঁকে ডাকো ভয় ও আশা নিয়ে’ (সূরা আরাফ, আয়াত ৫৬) সম্ভব হলে অজু করে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করা। নিজের গোনাহের কথা স্বীকার করে আল্লাহর নেয়ামতের স্বীকৃতি দেয়া। 

দোয়া কবুলের তাসবিহ্

আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে তার সুন্দর সুন্দর নাম দিয়ে জিকির বা আমল করার কথা বলেছেন। আল্লাহ তায়ালার সব গুণবাচক নামের আমলে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব ফজিলত “আস-সামিয়ু” আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে একটি। “আস-সামিয়ু” শব্দের অর্থ শ্রবণকারী। বৃহস্পতিবার চাশতের নামাজের পর আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম “আস-সামিয়ু” তাসবিহ্ ৫০০ বার পাঠ করে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা সেই দোয়া কবুল করেন। 

অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি শুধু বৃহস্পতিবার নয় বরং প্রতিদিন চাশতের নামাজের পর আল্লাহ তাআলার পবিত্র এই গুণবাচক নাম “আস-সামিয়ু” ১০০ বার করে পাঠ করবে। এই ব্যক্তি যে দোয়াই করুক না কেন তা গৃহীত হবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে এই তাসবিহ্টি পাঠ করার সময় মধ্যখানে কোন কথা বলা যাবে না। 

আরো পড়ুনঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা (Benefits and harms of Thankuni leaves‍‍‍‌)

পরিশেষে

মনে রাখতে হবে, আল্লাহর কাছে দোয়া করতে কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না বরং নিজের অন্যায় বা গুনাহের কথা নিজেই আল্লাহর কাছে পেশ করে ক্ষমা চাওয়া। যে ব্যক্তি ক্ষমার মানসিকতা নিয়ে আল্লাহকে ডাকবে; তিনিও তাকে ক্ষমা করে তাঁর রহমত দ্বারা প্রয়োজন গুলো পূরণ করে দেবেন। এমনটিই মহান আল্লাহ তাআলার ঘোষণা।

সুতরাং হাদিসের শর্তানুযায়ী আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রেখে, ধীরস্থিরভাবে হালাল খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দোয়া করাই জরুরি। তবেই মানুষের যেকোনো দোয়াই মহান আল্লাহ কবুল করে নেবেন।

আমাদের আজকের এই পোস্টটি সাজানো হয়েছে, কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন এই বিষয়ের উপর। কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন এই বিষয় সম্পর্কিত অন্যান্য সকল তথ্য নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন এ বিষয় নিয়ে আশা করি কিছুটা হলে উপকৃত হয়েছেন।

আমাদের এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর তথ্য জানতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মহেকে কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী হাদিসের ওপর আমল সাপেক্ষে আল্লাহর কাছে যথাযথভাবে ধারনা দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের প্রয়োজন পূরণে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন এই বিষয় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

১. কোন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না? 

উত্তর :- যে ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না, 

  • হারাম খাওয়া 
  • নিরাশ হওয়া ব্যক্তির 
  • আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করা 
  • দোয়া করার সময় মনোযোগী না থাকা 
  • আল্লাহর প্রদত্ত দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া। এই ধরনের ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।

২. তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে চাইলে কি পাওয়া যায়?

উত্তর :- শুধু যে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েই দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন তা কিন্তু নয়। দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হচ্ছে হালাল উপার্জন। আপনার উপার্জনে যদি সামান্য পরিমাণও হারাম উপার্জন থাকে, তবে তা দোয়া কবুলের শর্ত ভেঙ্গে দেয়। আপনি সৎ এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হলে শুধু তাহাজ্জুদ নয় যেকোনো সময় দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করবেন। 

৩. দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত কি? 

উত্তর :- দোয়া কবুলের শর্ত -

  • বিনয়ের সঙ্গে দুহাত তুলে দোয়া করা
  • পবিত্রতা অর্জনের পর দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা সেই দোয়া কবুল করেন 
  • মিনতিভরা কণ্ঠে দোয়া করা, নম্রতা ও মিনতি করে দোয়া করলে তাই ইবাদত হিসেবে আল্লাহর কাছে গণ্য হয়। 
  • আল্লাহর প্রশংসা ও দুরুদ শরীফ সহ দোয়া করা। 

৪. আল্লাহর কাছে কিভাবে সাহায্য প্রার্থনা করবো?

উত্তর :- আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবো-

হে আল্লাহ, আমি তোমার রহমতের অনেক আশা করছি। এক পলকের জন্য হলেও আমাকে নিজের কাছে রেখে যেওনা। আমার জন্য আমার সমস্ত বিষয়ে সংশোধন করুন। আল্লাহ তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। 

৫. আল্লাহর কাছে কিভাবে চাইলে আল্লাহ খুশি হন? 

উত্তর :- বান্দা আল্লাহকে মন থেকে ডাকলে আল্লাহ তায়ালা সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেন। যারা আল্লাহকে বেশি বেশি ডাকেন, দোয়া করেন, সাহায্য প্রার্থনা করেন তাদের প্রতি আল্লাহ বেশি খুশি হন। যারা আল্লাহর কাছে দোয়া করেন না, আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। 




#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!