ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়-মোটা হওয়ার ঔষধের নাম

পুষ্টিবিদ এবং ডায়েটিশিয়ানরা বলেন, ওজন অতিরিক্ত হলে তা জড়িয়ে ফেলার জন্য যেমন মানুষ চিকিৎসক এবং ডায়েটিশিয়ানদের পরামর্শ নেন ঠিক তেমনি ওজন কম থাকলে ওজন বাড়ানোর জন্যও ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নিয়ে থাকেন। তাছাড়াও বর্তমান যুগের অনেক মানুষ ফেসবুক, ইউটিউব এ ছবি বা ভিডিও দেখে ওজন কমানো বা বাড়ানোর প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন। কিন্তু এটা খুব একটা শরীরের জন্য সঠিক পদ্ধতি নয়। ইউটিউব দেখে অনেকের অনেক সময় সাইড এফেক্টও হয়। 

এলোপ্যাথিক ঔষধের মধ্যে কিছু ইউনানী ঔষধ রয়েছে যা সেবনের ফলে আপনি দ্রুত মোটা হতে পারবেন। এবং এই ওষুধগুলোর মধ্যে কোন সাইড ইফেক্টও থাকে না। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়-মোটা হওয়ার ঔষধের নাম এই বিষয়ের উপর বিস্তারিত তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে। ওজন বাড়ানোর সহজ উপায় বা মোটা হওয়ার ঔষধের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়ুন। তো চলুন আর দেরি না করে জেনে আসি, ওজন বাড়ানোর সহজ উপায় সম্পর্কে -

toc) #title=(Table of Content)

ওজন বাড়ানোর সহজ উপায় 

শরীরকে ফিট রাখতে কে না চায়! তবে অতিরিক্ত ওজন যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায় ঠিক তেমনি স্বাভাবিকের চেয়ে শরীরের ওজন কম হলে সেটিও ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং সুষম খাদ্যাভাস মেনে চলা ওজন বাড়ানোর জন্য আবশ্যক। হুট করে ওজন বাড়ানোর জন্য কোন ধরনের ঔষধ না খাওয়াই ভালো। দ্রুত ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করা ঠিক নয়। এখন জেনে নেই, ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়-মোটা হওয়ার ঔষধের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। তো চলুন প্রথমেই জেনে নেই ওজন বাড়ানোর কিছু সহজ উপায়, 

ক্যালরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ  

সারাদিন আপনার শরীর থেকে যত ক্যালরি ঝড়ে যাচ্ছে, তার চেয়ে ৩০০-৫০০ ক্যালরি বেশি গ্রহণ করতে হবে। ওজন বাড়ানোর জন্য আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার রাখতে হবে। কাজুবাদাম, আখরোট, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, পেস্তা, কিসমিস, খেজুর, আলুবখরা, মিষ্টি আলু, আলু, পনির, ডিম, বিভিন্ন ধরনের বীজ, ডাল, অ্যাভোকাডো, কলা, মুরগির মাংস, পিনাট বাটার ইত্যাদি। 

কম ফ্যাট ও বেশি প্রোটিন 

ফ্যাট জাতীয় বা তৈলাক্ত খাবারের তুলনায় প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। প্রোটিন পেশির ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে পেশি মজবুত হয় কর্মদক্ষতা বাড়ে। ফ্যাটজাতীয় খাবার শরীরে মেদ জমায় যা স্বাস্থ্যের জন্য একদমই ভালো নয়। 

দই ও দুধ 

শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য দুধ খুবই উপকারী। এবং সকালে দইয়ের সঙ্গে কলা মিশিয়ে সকালের নাস্তা করতে পারেন। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় দুধ, দই রাখবেন। এবং অবশ্যই ওজন বাড়ানোর জন্য একসঙ্গে অনেক খাবার খাওয়া একদমই উচিত নয় বরং হজমের সমস্যা হবে।

আরো পড়ুনঃ আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা

মোটা হওয়ার ঔষধের নাম 

আপনার উচিত সবার আগে আপনার উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন কত সেটা জানা। স্বাস্থ্য বাড়ানোর বা মোটা হওয়ার জন্য সব খাদ্য উপাদান রয়েছে এমন খাদ্য খেতে হবে। তার জন্য অবশ্যই পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিবেন। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, প্রোটিন, চর্বি, দুধ ও দুধজাতীয় খাদ্য এবং খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ ফলমূল রাখুন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী একজন মানুষের উচ্চতার অর্ধেক লিটারে পরিমাপ করে পানি পান করবেন। তো চলুন জেনে আসি ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়-মোটা হওয়ার ঔষধের নাম সম্পর্কে। মোটা হওয়ার কয়েকটি ঔষধের নাম হচ্ছে, 

দামাসিন (Damacin)

নেপচুন কোম্পানির একটি ঔষধ হচ্ছে দামাসিন। এই ঔষধটি আপনার খাবারের রুচি এবং ওজন বৃদ্ধি করতে খুবই সহায়ক। এই ওষুধটি মূলত ঠান্ডা, কাশি বা হাঁপানি রোগের ঔষধ। কিন্তু ওজন বৃদ্ধি করতে দামাসিন খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এবং এই ওষুধটির কোন সাইড এফেক্ট নেই, এর কোনো ক্ষতিকর দিক পাওয়া যায়নি। এই ঔষধটি খাবার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যেই স্বাভাবিকভাবেই আপনার ৪ থেকে ৫ কেজি ওজন বৃদ্ধি পাবে কোন সাইডএফেক্ট ছাড়াই। ঔষধটি খাবার নিয়ম, দিনে ১টি করে ২ বার খাবেন। এবং এই ওষুধটি খাওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর আপনার খাবারের রুচি আগের তুলনায় ২,৩ গুন বেড়ে যাবে। এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করবেন। 

রুচিটেব (Ruchitab)

রুচিটেব খুবই কার্যকরী একটি রুচি বর্ধক ঔষধ। এই ঔষধটি খাবার ফলে আপনার আগের তুলনায় খাবারের রুচি দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যাবে। তবে এই ঔষধটি খাবার ফলে আপনার শরীরে কোন ধরনের সমস্যা দিলে সাথে সাথে ঔষধটি খাওয়া বন্ধ করে দিবেন। এই ওষুধটির কিছুটা সাইড ইফেক্ট রয়েছে। তবে যেকোনো ধরনের ঔষধই খাবার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাবেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। 

আরো পড়ুনঃ পেট ফাঁপা কমানোর ট্যাবলেট

সিনকারা (Cinkara)

সিনকারা এই ঔষধটি মূলত একটি ভিটামিন সিরাপ। এটি হার্মদর্দ এর একটি উনানি ঔষধ। এবং এই সিনকারা সিরাপের কোন ধরনের সাইড ইফেক্ট নেই। আপনার খাবারে অরুচি এবং শারীরিক দুর্বলতা এই বিষয়গুলোতে খুবই কার্যকরী সিনকারা সিরাপ। সিনকারা সিরাপ খাওয়ার খুবই অল্প দিনেই আপনি আপনার ওজন বাড়ার বিষয় খেয়াল করে দেখতে পারবেন। সিনকারা সিরাপ দিনে দুই বা তিনবার 2 চামচ করে খেতে পারবেন। বাজারের যেকোনো ফার্মেসিতেই পেয়ে যাবেন সিনকারা সিরাপ। 

পিউটন

একটি রুচি বর্ধক ঔষধ পিউটন। পিউটন ঔষধটি খাওয়ার ফলে শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে সাথে পেটের মেদ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রতিদিন সকালে পেট কমানোর জন্য মেদ কমানোর ব্যায়ামগুলো করতে পারেন। দিনে ২বার খাবার পর তিন চা চামচ করে ওষুধটি খাবেন। আপনার যদি কিডনিতে কোন রোগ বা সমস্যা থাকে তাহলে মোটা হওয়ার এই ঔষুধগুলো না খাওয়াই আপনার জন্য উত্তম। মোটা হওয়ার এই ঔষধ গুলো অথবা যেকোন যেকোনো ধরনের ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। 

এতক্ষণ আপনি জানতে পারলেন ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়-মোটা হওয়ার ঔষধের নাম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। তো চলুন এবার জেনে আসি, মোটা হওয়ার জন্য যেসব ভুল কখনো করবেন না সেই ভুলগুলো সম্পর্কে। 

আরো পড়ুনঃ রানের চিপায় চুলকানি দূর করার ক্রিম

মোটা হওয়ার জন্য যেসব ভুল করবেন না 

এতক্ষণ আপনি জানলেন ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়-মোটা হওয়ার ঔষধের নাম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। এবার আপনি জানবেন মোটা হওয়ার জন্য যেসব ভুল কখনো করবেন না সেই সম্পর্কে। 

  • অনেকে মোটা হওয়ার জন্য স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খেয়ে থাকেন। এর ফলে শরীরে নানা ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। যা আপনাকে অনেক ভোগান্তিতে ফেলতে পারে। 
  • ওজন কম হওয়ার ফলে কখনো হীনমন্যতায় ভুগবেন না। শুকনা বলে অনেকে বিভিন্ন ধরনের ঠাট্টা করলেও মনে রাখবেন আপনার সুস্থতা জরুরি। অনেকের জিনগত কারণেও ওজন কম থাকে। ফলে মোটা হওয়ার বৃথা চেষ্টা করবেন না। শরীরে ভালো দিকটি মাথায় রেখে সন্তুষ্ট থাকুন। 
  • খুব জরুরী না হলে মোটা হওয়ার জন্য কোন ওষুধের সাহায্য নেবার প্রয়োজন নেই। কোন ভিটামিন বা অন্য কোন খাদ্য উপাদানের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • বার্গার, পিজ্জা, কেক বা প্যাস্ট্রি ইত্যাদি খাবার অনেকে ওজন বাড়ানোর জন্য তা কার্যকর ভেবে খান। জাঙ্ক ফুড বা প্রক্রিয়াজাত এসব খাবার শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। 

আরো পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ব্যায়াম

শেষকথা 

সমাজে খুবই প্রচলিত হচ্ছে, মোটা হলে যেমন কটু কথা, কত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় ঠিক তেমনি ওজন একটু কম হলেও একই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। নানা ধরনের তির্যক মন্তব্য আর নেতিবাচক ঠাট্টা যেমন, বাড়িতে খেতে দেয় না, ফু দিলে উড়ে যাবি, অপুষ্টিতে ভুগতেছে, শুঁটকি, দুর্ভিক্ষ এরকম মন্তব্যকে এড়িয়ে চলুন। মোটা হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ নয়, সুস্থ থাকাই সুস্বাস্থ্যের কাম্য। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর ও প্রোটিন খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য বাড়ানো সম্ভব। স্বাস্থ্য বাড়ানোর জন্য বা মোটা হওয়ার জন্য আলাদা কোন ঔষধ না খাওয়াই ভালো। 

আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাকে জানাতে চেষ্টা করেছি ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়-মোটা হওয়ার ঔষধের নাম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। যেহেতু নিয়মিত শরীর চর্চা করে পুষ্টিকর, প্রোটিন খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য বাড়ানো সম্ভব তাহলে আলাদাভাবে মোটা হওয়ার কোন ঔষধ না খাওয়াই ভালো। বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর বা প্রোটিন খাবার খেয়েও যাদের স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে না তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করবেন। না জেনে শুনে বা ভালো করে না বুঝে কোন ধরনের ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। 

নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, সবুজ শাকসবজি ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, শরীরকে সুস্থ রাখুন। ধন্যবাদ। 

আরো পড়ুনঃ আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায়

ওজন বাড়ানোর সহজ উপায় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

প্রশ্ন: কি কি খাবার খেলে মানুষ মোটা হয়? 

উত্তর:- পুষ্টিকর ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে স্বাস্থ্য বাড়ানো সম্ভব। যেমন, দুধ, কলা, ডিম, খেজুর, ডাল, সবুজ শাক সবজি, নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি ইত্যাদি। 

প্রশ্ন: রাতে ভাত খেলে কি ওজন বাড়ে? 

উত্তর:- একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ওজন বাড়ার সঙ্গে ভাতের কোন সম্পর্ক নেই। আরো একজন পুষ্টিবিদ বলেছেন, অন্যান্য ভাজাপুরা থেকে পরিমিত পরিমাণে ভাত খাওয়া শরীরে অনেক উপকার করে। কিন্তু অতিরিক্ত ভাত খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। 

প্রশ্ন: কি কি সবজি খেলে ওজন বাড়ে না? 

উত্তর:- মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া অথবা মিষ্টি স্বাদের যেকোনো সবজি বেশি খেলে ওজন বাড়ে। সাধারণত মাটির নিচে জন্মানোর যেকোন সবজি খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। গাজর, আলু, মোলা, কচু, শালগম, মানকচু ইত্যাদি। এই সবজিগুলো নিয়মিত বেশি খেলেই ওজন বাড়বে। মাটির উপরে ফলানো সবুজ শাকসবজি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

প্রশ্ন: ৩০ দিনে মোটা হওয়ার উপায়? 

উত্তর:- নিয়মিত প্রতিদিন ৫০০-১০০০ বেশি ক্যালোরি হওয়ার চেষ্টা করুন যা আপনার সাধারণত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন হয়। আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে উচ্চ ক্যালোরি আইটেম বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো এবং স্বাস্থ্যকর প্রোটিন খাবার রাখবেন।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!