পুরো শরীর ধৌত করার মাধ্যমে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের একটি গ্রন্থা হচ্ছে, ইসলামের পরিভাষায় ফরজ গোসল। এবং ইসলামের পরিভাষায় বাধ্যতামূলক কিছু গোসল হচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নারী পুরুষের যৌন সঙ্গম, হায়েজ-নেফাস সমাপ্তির পর, সন্তান প্রসবের পর, বীর্যপাতের পর এবং মৃত্যুর পর গোসল করা ফরজ। এছাড়াও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, পাক পবিত্র থাকার জন্য নিয়মিত গোসল করা ভালো।
শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে, হজ্জের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পূর্বে, ইহরাম বাধার পূর্বে, ঈদের নামাজের পূর্বে, অজ্ঞান থাকলে জ্ঞান ফিরে আসার পরে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব। আমাদের আজকের এই পোস্টের মূল বিষয় হচ্ছে, ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য নিয়ে। আশা করছি পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে, ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তো চলুন দেরি না করে প্রথমে জেনে আসি ফরজ গোসল সম্পর্কে।
toc) #title=(Table of Content)
ইসলামের দৃষ্টিতে গোসলের পানি হচ্ছে
- পুকুরের পানি
- বরফ গলা পানি
- বৃষ্টির পানি
- কূয়ার পানি
- ঝর্ণা, নদী, সাগরের পানি
- মটরে তোলা টেঙ্কের পানি।
আরো পড়ুনঃ যে দোয়া পড়লে মনের আশা পূরণ হবে
ইসলামের দৃষ্টিতে যে পানি দিয়ে গোসল করা জায়েজ নয়
- অপবিত্র, অপরিচ্ছন্ন পানি
- অযু বা গোসলের ব্যবহার করা পানি
- অপবিত্র প্রাণীর পানকৃত বৈশিষ্ট্য পানি। যেমন, শুকর, কুকুর ও অন্যান্য হিংস্র প্রাণী।
- ফল বা গাছ নিসৃত পানি
- পানির মধ্যে কোন কিছু মেশানোর কারণে রং বা গন্ধ পরিবর্তিত হওয়া পানি
- পানিতে অপবিত্র কোনো জিনিস মিশে গেছে এরকম পানি।
আরো পড়ুনঃ রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত
গোসলের শিষ্টাচার
- লোক সমাগম স্থানে গোসল করা যাবে না।
- উচ্চ স্থানে বসে গোসল করা, যাতে করে পানি গড়িয়ে যায় এবং গায়ে পানির ছিটা না লাগে।
- পানি অপচয় করা যাবে না।
- ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা।
- বাহ্যিক অঙ্গের চুল পরিমাণ জায়গা শুকনা থাকলে ফরজ গোসল শুদ্ধ হবে না। (শরহে মুখতাসারুত তাহাভি ১/৫১০)।
- ফরজ গোসলের সময় পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুলের গোড়া ভালোভাবে ভিজতে হবে।
- রং, নেল পলিশ বা সুপার গ্লু ইত্যাদি যা শরীরে পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তা উঠিয়ে নিচে পানি পৌঁছানো জরুরী, তা না হলে ফরজ গোসল শুদ্ধ হবে না।
- নাকের নাকফুল নাড়িয়ে ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি।
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার ৫টি উপায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার ৫টি উপায়
পবিত্রতা তথা গোসল সম্পর্কে আল কুরআন বলেছে
إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ’তাআলা তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা:বাকারা, আয়াত-২২২)
ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কিত তথ্যে, মহান আল্লাহ’তালা কুরআনুল কারীমে স্বপ্নদোষ অথবা নারী পুরুষের যৌ *ন মিলনে বা যেকোন উপায়ে বীর্যপাতের মাধ্যমে, হাফেজ নেফাসের কারণে অপবিত্র হলে তাকে পবিত্রতা হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-
وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ
অর্থ: আর যদি তোমরা অপবিত্র হও, তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও। (সূরা:মায়েদা,আয়াত:৬)
فِیۡهِ رجَالٌ یُّحِبُّوۡنَ اَنۡ یَّتَطَهَّرُوۡا وَ اللّهُ یُحِبُّ الۡمُطَّهِّرِیۡنَ
অর্থ : এমন লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ তা’আলা ভালবাসেন।
আরো পড়ুনঃ ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাত It is Sunnah to do things before going to sleep
ফরজ গোসলের নিয়ম
ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া হচ্ছে,
গোসলের দোয়া-
أنا أستحم للتخلص من الجنابة
উচ্চারণ: নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি।
অর্থ: আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।
১. গোসলের দোয়া পড়ে, নিয়ত করে, বিসমিল্লাহ্ বলে দুই হাত কন্জি পর্যন্ত ভালো করে ধৌত করা।
২. শরীরের কোন জায়গায় অপবিত্র কোনো বস্তু থাকলে তা পরিষ্কার করা।
৩. ওযু করা, গড়গড়া কুলি করা ৩ বার (রোজাদার হলে গড়গড়া করা যাবে না)।
৪. তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা।
৫. ওযু করার পর মাথায় এমন ভাবে পানি ঢালা যেন চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছানো যায়।
৬. ডান কাঁধে পরে বাম কাঁধে পানি ঢেলে সমস্ত শরীর ধৌত করা। খেয়াল রাখবেন যেন শরীরের কোন অংশ শুকনা না থাকে।
৭. শেষে পা ধোয়া।
৮. সমস্ত শরীর শুকনা ভালো কাপড় দিয়ে মুছে শুকনা কাপড় পরিধান করা।
আরো পড়ুনঃ ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে ঘুমানো উত্তম
সর্বশেষ
গোসল আমাদের দৈনন্দিন কাজের একটি অংশ। সুস্বাস্থ্য, সুস্থতা ও নিজেকে ফ্রেশ রাখার জন্য প্রতিদিন গোসল করা জরুরী। তাছাড়া পাক পবিত্র থাকাটা ঈমানের একটি অঙ্গ। সব সময় নিজেকে পবিত্র ও সুস্থ রাখতে হলে আমাদের নিয়মিত গোসল করতে হবে। আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা আপনাকে জানাতে চেষ্টা করেছি ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য। ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া এই পুরো পোস্টটি পড়ে আশা করছি আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। নিয়মিত গোসল করুন পরিষ্কার থাকুন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করুন। আল্লাহ হাফেজ।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন
ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
প্রশ্ন: গোসলের ফরজ তিনটি কি কি?
উত্তর:- গোসলের ফরজ তিনটি। যথা,
১. গড়গড়া সহ কুলি করা।
২. নাকে পানি দেওয়া।
৩. সারা শরীর ধৌত করা।
প্রশ্ন: কোন পানিতে গোসল করা ভালো?
উত্তর:- গোসলের সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। তবে এই গরম পানি মাথায় ব্যবহার করা উচিত নয়। মাথা ধোয়ার সময় স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করুন।
প্রশ্ন: ঠান্ডা পানি খাওয়া ভালো কেন?
উত্তর:- ঠান্ডা পানি খাওয়ার উপকারিতা অফুরন্ত। অনেক উপকারিতা রয়েছে ঠান্ডা পানির। ঠান্ডা পানি পান করার ফলে শরীরকে হাইড্রেট করতে, ওজন কমাতে এবং আপনার বিপাকের হার বাড়াতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা জনিত সমস্যার সময়ে ঠান্ডা পানি পান করা উচিত নয়।
প্রশ্ন: গরম নাকি ঠান্ডা পানিতে গোসল করা ভালো?
উত্তর:- ঠান্ডা পানি আপনার প্রদাহ কমাতে, সঞ্চালন উন্নতি করতে, ব্যথা উপশম করতে, চাপের মাত্রা কমাতে, পেশীর ব্যাথা এবং ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে গরম পানি ও শরীরের জন্য অনেক উপকারি।